যখন মা হওয়ার পরিকল্পনা করছেন কিছু বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে, যা আপনাকে গর্ভাবস্থার সময় অনেক সমস্যার হাত থেকে রক্ষা করবে। কিন্তু অনেকেই প্রেগনেন্সির প্ল্যানিং এর সময় খুব একটা গুরুত্ব দেয় না, যার ফলে গর্ভধারণের ক্ষেত্রে বা গর্ভাবস্থায় কোনও না কোনও সমস্যা দেখা দিতে পারে। গর্ভাবস্থায় মহিলাদের অনেক পরিবর্তন দেখা দেয়, যার মধ্যে শারীরিক এবং মানসিক পরিবর্তন সবার আগে পরিলক্ষিত হয়। তাই সম্ভাব্য মা এবং অনাগত শিশুর সুস্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে প্রেগনেন্সির আগেই কিছু পরিকল্পনা করা ভাল।
গর্ভবতী হওয়ার আগে যেসব বিষয়ের দিকে বিশেষভাবে মনোযোগ দিতে হবেঃ
যখনি মা হওয়ার পরিকল্পনা মাথায় আসবে, প্রথমেই আপনাকে একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে। বিশেষজ্ঞ আপনাকে স্বাস্থ্যকর প্রেগনেন্সির প্ল্যান তৈরি করতে সহায়তা করবেন।
গর্ভধারণের তিন মাস আগের সময়টাকে প্রি-প্রেগনেন্সি পিরিয়ড বলা হয়, এ সময় নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ অনুসারে লাইফস্টাইলে পরিবর্তন আনলে অনেক রকম সম্ভাব্য সমসসার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

গর্ভবতী হওয়ার আগে ডাক্তারের সাথে অবশ্যই আলোচনা করা উচিত এবং আপনার মেডিকেল হিস্ট্রি পরীক্ষা নিরীক্ষা সাপেক্ষে নিম্নলিখিত বিষয়গুলির ওপর বিশেষ গুরুত্ত দেয়া উচিত –
ফাইব্রয়েড এবং এন্ডোমেট্রিওসিসের পরীক্ষা
ফাইব্রয়েড (Fibroid) হচ্ছে একধরনের টিস্যু বা মাংসপিণ্ড যা WOMB বা UTERUS এর চারপাশে তৈরি হয়, অনেক সময় এগুল ব্যাথামুক্ত হয়, আর এন্ডোমেট্রিওসিস(endometriosis) হল এক ধরনের টিস্যু যা UTERUS এর চারপাশে তৈরি হয়, যা অনেক ব্যাথাযুক্ত হতে পারে এবং গর্ভধারণে বাধার সৃষ্টি করতে পারে। এজন্য ফাইব্রয়েড এবং এন্ডোমেট্রিওসিসের পরীক্ষা করিয়ে প্রয়জনে চিকিৎসা নেয়া যেতে পারে। –
ডাউন সিনড্রোম ও থ্যালাসেমিয়া
ডাউন সিনড্রোম(Down syndrome) হল একধরনের জেনেটিক ডিজঅর্ডার। প্রতিটি মানুষ ২৩ জোড়া বা ৪৬ টি ক্রোমজম নিয়ে জন্মায়, আর যখন কেউ ১ টি অতিরিক্ত ক্রোমজম অর্থাৎ মোট ৪৭ টি ক্রোমজম নিয়ে জন্মায় তখন তাকে ডাউন সিনড্রোম বলা হয়, যা তাদের শরীর ও বুদ্ধি বৃদ্ধিতে বাধার সৃষ্টি করে।
পরিবারে যদি অতীত ও বর্তমানে কোন ডাউন সিনড্রোম, থ্যালাসেমিয়ার ইতিহাস থেকে থাকে তবে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ সাপেক্ষে পদক্ষেপ নিন।
মূত্রনালীতে সংক্রমণ
সবসময় মুত্রনালীর সংক্রমণ হতে নিজেকে রক্ষা করতে হবে। যদি মূত্রনালীতে সংক্রমণ হওয়ার কোনও লক্ষণ দেখা দেয়, তবে দ্রুত পরীক্ষা করান এবং চিকিৎসা নিন। এধরণের সংক্রমণ হতে দূরে থাকতে মাঝে মাঝে হালকা গরম পানিতে লবন দিয়ে কিছুক্ষণ বসে থাকুন, এতে অনেক উপকার পাবেন।
ডায়াবেটিস ও থাইরয়েড
যদি আগে থেকেই ডায়াবেটিস, থাইরয়েড, হাঁপানি, কিডনি, হৃদরোগ, ইত্যাদির সমস্যা থেকে থাকে, তবে অবশ্যই গর্ভধারনের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেগুলি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, নয়ত নবজাতকও ঝুঁকিতে পরতে পারে।
অন্যান্য পরীক্ষা
গর্ভধারনের আগেই এইচআইভি, হেপাটাইটিস বি, সিফিলিস সহ ডাক্তারের পরামর্শ মতে আরো কিছু জরুরি পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে, যাতে করে গর্ভাবস্থায় বা প্রসবকালীন সময় এইধরনের সংক্রমণ শিশুর মধ্যে সংক্রমিত না হয়।
ওজন নিয়ন্ত্রণ
বডি মাস ইনডেক্স (BMI) অনুযায়ী আপনার ওজন যদি বেশি বা কম হয়, তবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী আপনাকে ওজন কমানো বা বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে। স্বাভাবিক অবস্থায় আপনার বডি মাস ইনডেক্স (BMI) ১৮.৫ থেকে ২২.৯ এর মধ্যে থাকা উচিত।
এইসব বিষয় অনেক গুরুত্বের সাথে দেখতে হবে, তাহলে গর্ভধারণের সময় এবং পরবর্তী সময় সমস্যা কম হবে আর স্বাস্থ্যকর গর্ভকালীন সময় উপভোগ করতে পারবেন।